দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের এখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। সবচেয়ে বেশি বেগতিক অবস্থায় রয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গেল ১২ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
গত মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দুই অঙ্কের একেবারেই কাছাকাছি অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির হার বেশি মাত্রায় বাড়লেও মজুরির হার বেড়েছে তুলনামূলক কম। টানা তিন মাস ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতির প্রভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে মানুষ খরচের খাতা ছোট করেছেন। অনেকে আবার ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। এটা ঠিক, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে জ্বালানি তেল-গ্যাস ও খাদ্যপণ্যের দাম। বিশ্বের অনেক দেশেই দিনদিন এ মূল্যস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তবে অনেক দেশে তা কমেও এসেছে।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দেশের মূল্যস্ফীতির পেছনে ভূ-অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা না কাজ করছে, এর চেয়ে বেশি কাজ করছে অসাধু সিন্ডিকেটদের নৈরাজ্য। মঙ্গলবার বাংলার মুখ বিডি ২৪ এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা ব্যর্থ বলেই অতিরিক্ত মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট চক্র বাজারে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তেল, চাল, কৃষিপণ্য তো বটেই, কুরবানির ঈদ সামনে রেখে এই চক্র মসলাজাতীয় পণ্যের দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ১৩০ টাকায় আমদানি করা প্রতি কেজি আদা ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৩০ টাকা কেজির জিরা ক্রেতাকে ৮৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া গত এক মাসে এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি ও রসুনের দামও হুহু করে বেড়েছে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের একাধিক সংস্থা বাজার অভিযানে নেমেছে। তবে তারা দোষীদের চিহ্নিত করলেও দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা, আর ভোক্তা বাজারে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।
আসন্ন ঈদ ঘিরে মসলা ও অন্যান্য পণ্যের দাম যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের তদারকি টিম, সিটি করপোরেশনসহ একাধিক সংস্থা ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় কাজ করছে। তবে বাস্তবতা বলছে, বাজারে এমন কোনো পণ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার দাম কমেছে। বরং সব পণ্যের দামই লাগামছাড়া। এর মধ্যে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে যৌক্তিকভাবে আর কিছুর দাম কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে। মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতির চাপ এতটাই ভয়াবহ যে এটি যে কোনো দেশ, এমনকি বিশ্বের গতিপথ বদলে দিতে পারে। তাই যৌক্তিক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার পাশাপাশি নজর দিতে হবে এসব সুযোগসন্ধানীর দিকে-যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন, বিপদে ফেলে দিচ্ছেন পুরো দেশ ও জাতিকে।