1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : News Editor : News Editor
রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

তেলাপোকা মারার স্প্রে’র প্রভাবে দুই শিশুর মৃত্যু, কী বলছে পরিবার ও পুলিশ

সাংবাদিক
  • আপডেট সময় : বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩
  • ২২ বার সংবাদ দেখেছেন
তেলাপোকা মারার স্প্রে'র প্রভাবে দুই শিশুর মৃত্যু, কী বলছে পরিবার ও পুলিশ
তেলাপোকা মারার স্প্রে'র প্রভাবে দুই শিশুর মৃত্যু, কী বলছে পরিবার ও পুলিশ

ঢাকায় বসুন্ধরা এলাকায় রোববার এক পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পুলিশ এবং চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, শরীরে ‘টক্সিক কেমিক্যালের’ প্রভাবে শিশু দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

ওই পরিবারের আরো তিনজন সদস্য চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছেন।

এই ঘটনায় সোমবার গুলশানের ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে, এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল রাতেই পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ বলছে, ‘দায়িত্বে অবহেলাজনিত’ মৃত্যুর অভিযোগে দায়ের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই ব্যাক্তিকে।

কী ঘটেছিল? পরিবার কী বলছে?

রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোষ্টে প্রথম ‘কীটনাশকের প্রভাবে স্কুল পড়ুয়া দুুইটি শিশুর মৃত্যু’র কথা জানা যায়। অল্প সময়ে সেটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং সোমবার সারাদিনই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিবাংলার মুখ বিডি ২৪ বিষয়টি নিয়ে ওই দুই শিশুর পরিবার, হাসপাতালের চিকিৎসক, পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মারা যাওয়া শিশু দুইজনের বয়স যথাক্রমে ১৫ বছর এবং নয় বছর।

শিশু দুইজনের মা শারমিন জাহান লিমার চাচাতো ভাই শিহাবুল হক চৌধুরী বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে বলেছেন, ঘটনার আগের দিন ‘পেস্ট কন্ট্রোল’ থেকে লোক এসেছিল ঔষধ দিতে।

তিনি বলেছেন, “পেস্ট কন্ট্রোলের লোক বলেছিল (স্প্রে করার পর) দুই ঘণ্টায় যাতে কেউ ঘরে না ঢোকে। দুই ভাই এবং তাদের মা,বাবা ও বোন একদিন ঘরে ঢোকেনি। তারা পরের দিন ঘরে ঢোকার পরে সব কয়জন অসুস্থ হয়ে পড়ে।”

মি. হক বলেছেন, পরিবারের সদস্যরা ঘরে ঢোকার পর কিছু সময় সব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ঘণ্টা খানেক পরে তাদের সবারই পেটে ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়।

মারা যাওয়া শিশু দুইজনের নানি শামসুন্নাহার বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে বলেছেন, অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারটির সব কজন সদস্য বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতেই এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।

সেখানেই মারা যায় দুই ভাই।

প্রায় দুইদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শিশুদের বাবা মোবারক হোসেন তুষার এবং মা শারমিন জাহান লিমা তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেছেন।

এমন অকস্মাৎ এবং অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে পরিবারটি শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন মিজ শামসুন্নাহার।

তিনি বলছিলেন, “কী হলো, কেমন করে হলো এখনও মাথায় ঢোকে না। আমি কাল কথাই বলতে পারছিলাম না কারও সাথে। কী বলবো আসলে? এভাবে কেউ মারা যাইতে পারে?”

কী বলছে হাসপাতাল এবং পুলিশ?

এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে বলেছেন, রোববার ভোরে ওই পরিবারের মোট পাঁচজন সদস্য তাদের হাসপাতালে ভর্তি হন।

তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তির পর ছোট ছেলে সকালেই মারা যান, এবং বড় ছেলেটি মারা যায় বিকেলের দিকে।

মি. মাহমুদ শরীরে ‘টক্সিক কেমিক্যালের’ প্রভাবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করলেও, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলছেন।

এদিকে, পুলিশও প্রাথমিক তদন্তে তেলাপোকা-ছারপোকা মারার ঔষধের বিষক্রিয়ার কথা বলছে।

ভাটারা থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মো: শরীফুল ইসলাম বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে বলেছেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।

“যিনি স্প্রে করেছেন তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি, তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে,” তিনি বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে জানিয়েছেন।

মি. ইসলাম বলেছেন, “স্প্রে করার ২-৩ ঘণ্টা পরই উনি বাসায় ঢুকতে বলেছেন, এটা ঠিক না। আমরা আরও তদন্ত করছি, জানার চেষ্টা করছি ঠিক কী পরামর্শ দিয়েছিল ওই কোম্পানির লোক।”

গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

কীটনাশক সার্ভিস কোম্পানি কী বলছে

পরিবার জানিয়েছে, ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের বাসায় তেলাপোকা মারার স্প্রে ছেটানো হয়েছিল।

দুই শিশুর মৃত্যুর মর্মান্তিক ও আলোচিত ঘটনার পর পেস্ট কন্ট্রোল বা কীটনাশক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা মন্তব্য করতে চাননি।

তবে, প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে বলেছেন, “আসলে আমরা বুঝতে পারছি না, কেন এমন হলো! আমরা অনেক জায়গায় সার্ভিস দিয়েছি, এমনটা এবারই হলো।”

কীটনাশকের বিষ কতটা ভয়াবহ?

ঢাকায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় জিগাতলার জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে একজন মারা গিয়েছিলেন, যেটি চিকিৎসকদের ধারণা কীটনাশকের বিষক্রিয়ার ফলেই ঘটেছিল।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ডা. উজ্জ্বল কুমার মল্লিক বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে বলেছেন, কীটনাশকের বিষ মানুষের জন্য ভয়াবহ হতে পারে।

তিনি বলেন, “কীটনাশক তো বিষ, এটি মানুষের শরীরে কোষে কোষে পৌঁছে যায়। এটা হচ্ছে মাল্টিঅর্গান ফেইলিওর, কিডনি লিভার, ব্রেনেও প্রভাব পড়ে, খিচুনি হয় – এরপর তারা মরে যান, সব বিষেই।”

তিনি বলেন, “এটা যখন বদ্ধ রুমের ভেতরে দেয়, তখন এটা পরিমাণের ওপর নির্ভর করে, সাধারণভাবে এটি ক্ষতিকর। ধানক্ষেতেও এমন হতে পারে, যেদিকে বাতাস প্রবাহিত হয়, সেদিকে যদি কোন ব্যক্তি থাকে সেক্ষেত্রেও একই ক্ষতি হতে পারে”।

এই ধরনের ঘটনায় যদি বিষের প্রতিক্রিয়া এবং পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ক্ষতি বা মৃত্যুর হার অনেক বেশি হতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক।

প্যারাকুয়েড নামে আরও একটি বিষের কথা তিনি বলেন, এই বিষ বেশি পরিমাণে যদি শরীরে ঢোকে তাহলে মানুষ বেঁচে যাওয়ার হার একেবারেই কম।

পেস্টোকিল নামে একটি কীটনাশক সেবাদানকারী কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা আল মামুন বাংলার মুখ বিডি ২৪ কে বলেছেন, “কীট মানে পোকামাকড় মারতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড নামের ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়, যা থেকে ফসফিন গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাস মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।”

তিনি এখানে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন।

“দক্ষ লোক দিয়ে ঔষধ দেয়ানো, ঔষধের মাত্রা সম্পর্কে জানা, পরিবারের অন্তত একজন সচেতনভাবে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জেনে সবাইকে অবগত করা জরুরী। যেহেতু এটা একটা ‘কিলিং এলিমেন্ট’ এটার ক্ষতিকর দিক থাকবেই, তাই কতোটা কম ক্ষতি হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার,” বলেন মি. আল মামুন।

কোন ঔষধ দেয়া হচ্ছে, কী পরিমাণে দেয়া হচ্ছে, প্রভাব কতক্ষণ থাকবে এবং এরপর কীভাবে বাড়ি পরিস্কার করা হবে – এসব তথ্য নিশ্চিত হয়েই এই কীটনাশকের স্প্রে ছেটানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সামাজিক যোগাযোগ এ শেয়ার করুন

একই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২১ বাংলার মুখ বিডি
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ইজি আইটি সল্যুশন