1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : News Editor : News Editor
রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

কূটনৈতিক সম্পর্কের দায় কি এক পক্ষের?

বাংলার মুখ বিডি ২৪ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩
  • ৪৪ বার সংবাদ দেখেছেন
কূটনৈতিক সম্পর্কের দায় কি এক পক্ষের?
কূটনৈতিক সম্পর্কের দায় কি এক পক্ষের?

কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে সম্প্রতি দেশে বেশ আলোচনা হয়ে গেল, যদিও আমি মনে করি এটি ছিল অপ্রয়োজনীয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের বক্তব্য অনুযায়ী, এটা ছিল রুটিন কাজের ধারাবাহিক সিদ্ধান্ত, যা কাকতালীয়ভাবে ওই সময়ে নিতে হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বিদেশে আমাদের রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসকর্মীদের কোনো ধরনের নিরাপত্তা/প্রটোকল দেওয়া হয় না। হোলি আর্টিজান ঘটনার পর কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের চলাচলে বাড়তি নিরাপত্তার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যেটির প্রয়োজন বর্তমানে নেই।

যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সহযোগী দেশের ভূমিকা স্বীকার করে নিয়েও বলতে হয়, এটি আরও আগে করা হয়নি কেন, কেন এতদিন লাগল এ সিদ্ধান্ত নিতে? কারণ ব্যয়টা কিন্তু পাবলিক ফান্ড থেকেই করা হয়েছে, যেটা জনগণের করের পয়সা। সেই সঙ্গে আছে পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীতে জনবল সংকটের সমস্যা। যে সমস্যার কারণে আইনশৃঙ্খলাজনিত আমাদের পাহাড়সম সমস্যা জমে আছে।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতিটি পয়সা হিসাবযোগ্য। চলাচলে নিরাপত্তা প্রত্যাহারের ঘটনায় সাংবাদিকসহ কিছু লোকের প্রতিক্রিয়া দেখে অবাকই হতে হয়। মনে হয় যেন যারপরনাইভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা দেশে ঘটে গেছে। মূল সমস্যাটা আসলে ওখানেই। আমাদের দেশে কিছু মানুষের মনোবৃত্তি বা মানসিকতা এবং কিছু অর্বাচীন সংবাদকর্মীর অপরিপক্বতা-সব মিলে আমরা সাদা বা বাদামি সব দেশের কূটনীতিক বা প্রতিনিধি বা দূতাবাসকর্মীদের এমনভাবে উপস্থাপন করি, যেন মনে হয় এসব দূতাবাসকর্মী অন্য কোনো গ্রহ থেকে আমাদের উদ্ধার করতে এসেছে।

কিছু লোক তো হাত কচলিয়ে তাদের মুখপানে তাকিয়ে থাকে; যেন প্রভুরা এসে পড়েছে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিতে; ফলে তারাও এ দেশে এসে নিজেদের বিশেষ কিছু ভাবা শুরু করে দেয় এবং বিশেষ সুবিধা নিতেও চায় বা নেয়।

এ প্রসঙ্গে বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তি পত্রিকায় লিখেছিলেন, এসব দূতাবাসকর্মী বা কূটনীতিকরা এদেশে এসে যখন বিশাল কম্পাউন্ডের আলিশান দূতাবাসসংলগ্ন ফুটপাতের ওপর অবৈধভাবে চৌকিদারের ঘর তৈরি করেন এবং তাতে কোনো বাধা বা আইনি ব্যবস্থার সম্মুখীন হন না, তখনই তারা মনে করে নেন, এদেশে তারা যেন বিশেষ কিছু এবং তারা যা খুশি করতে পারেন, বলতে পারেন। যদিও এসব চৌকিদারের ঘরের কয়েকটি সাবেক মেয়র আনিসুল ইসলাম ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অথচ বিদেশে দেখেছি একই ভবনের মধ্যে রুম ভাড়া নিয়ে অর্ধ ডজন বা তারও বেশি দূতাবাস আর দশটা সাধারণ অফিসের মতো তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং তাদের কর্মীরাও সাধারণ গণপরিবহণে যাতায়াত করছে। এ দেশে এলে তাদের প্রভুসুলভ মানসিকতা জেগে ওঠে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অযোগ্য খয়ের খা প্রকৃতির ব্যক্তি দূতাবাসের কর্মচারী বা উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন-যাদের জ্ঞান, মেধা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তাদের ইউরোপীয় কিছু দেশের দূতাবাসে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, সচিব বা সহকারী হিসাবে কাজ করতে দেখেছি।

দেশের রাজনৈতিক বা আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে যাদের আদৌ স্বচ্ছ ধারণা আছে কিনা সন্দেহ হয়, তারাই এসব দূতাবাসের বিদেশি কর্মচারীদের উপদেশ দিয়ে থাকেন। বুঝুন এবার অবস্থা। এর ফলে কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর দূতাবাসগুলোর মনোভাব বা আচরণের প্রতিফলন ঘটে। ভিসাপ্রার্থীদের প্রতি অবমাননাকর এবং অপমানজনক আচরণের মধ্য দিয়ে তা আরও নগ্নভাবে ফুটে ওঠে।

পৃথিবীর আর কোনো দেশে ভিসাপ্রার্থীদের প্রতি এ ধরনের অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ করতে দেখিনি। ভিসার জন্য বিবাহ সনদ চাওয়া যেতে পারে; কিন্তু বিয়ের আগে কুমারী বা অবিবাহিত থাকার সনদ চাওয়ার নিয়ম বিশ্বের কোথাও আছে কিনা আমার অন্তত জানা নেই। এ প্রসঙ্গে আমার এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বন্ধু, যিনি ফরাসি ভাষারও শিক্ষক, মন্তব্য করেছিলেন, দূতাবাসগুলোর ভিসা সেকশনে কুলাঙ্গারগুলোকে বসানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা জালিয়াতি শনাক্ত করতে পারার প্রযুক্তি ব্যবহারের দাবিদার এসব দূতাবাস অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াও প্রার্থীর শিশুকালের পাসপোর্টসহ প্রতিবার সব পাসপোর্ট জমা দিতে বাধ্য করে।

তথ্য সংরক্ষণের আধুনিক প্রযুক্তি যদি থাকেই, তাহলে এ অপ্রয়োজনীয় কাজ বা হয়রানি কেন? আরেকটি খুবই গুরুতর বিষয় হলো, সামান্য কোনো কারণে ভিসা না দিলে ভিসাপ্রার্থীর পাসপোর্টে প্রত্যাখ্যান সিল মেরে দেওয়া। এ কাজটি করা কতটুকু বিধি বা আইনসম্মত তার আইনগত দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ও জরুরি। কারণ তাদের এ অবিবেচনাপ্রসূত, হঠকারী, খামখেয়ালিপূর্ণ কাজের কারণে হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি ও বিপদে পড়ছে, অথচ পাসপোর্টে সিল না মেরেও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কারণ এক দেশের ভিসানীতি অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়।

প্রার্থীর মূল্যবান পাসপোর্টের ক্ষতি সাধন করার কোনো অধিকার নেই তাদের। মনে রাখা প্রয়োজন, ভিসার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশের হলেও পাসপোর্টের মালিক আবেদনকারী তথা বাংলাদেশ সরকার। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বিশ্বের কোথাও, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও, যেসব দেশ থেকে সব ধরনের সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে, তাদের নাগরিকদের সঙ্গেও এ ধরনের অবমাননাকর আচরণ করা হয় না।

অবশ্য যে কোনো আত্মমর্যাদাশীল জাতি সমতার ভিত্তিতে অন্য দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে নিজেদের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখে সম্পর্কের খাতিরে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সম্পর্ক বজায় রাখে, যা আমাদের দেশে আমরা করতে ব্যর্থ হই। এ কারণে ভিনদেশি এসব দূতাবাস কর্মচারী আমাদের নাগরিকদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করার দুঃসাহস দেখাতে পারে।

অন্য দেশ প্রবাসে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের সঙ্গে তুচ্ছ কোনো ঘটনা ঘটানো হলেও যেভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূত বা মিশনপ্রধানকে ডেকে নিয়ে শাসায়, তেমনটি আমরা করতে ব্যর্থ হই বা করতে পারি না। সময় এসেছে বিদেশি কূটনীতিকদের এটা বুঝিয়ে দেওয়ার বা অনুধাবন করানোর যে, তারা যেন সমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সব কূটনীতিককে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে দেখেন এবং তাদের বিধি মোতাবেক ও আইন অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।

আর তাদের এটাও বুঝতে হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ এবং এ দেশের নাগরিকরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে তাদের আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয় রক্ষার জন্য। অন্য অনেক দেশের মতো চুক্তি করে বা সমঝোতার মাধ্যমে স্বাধীনতা পায়নি। সুতরাং বাংলাদেশিদের সম্মান করলে তারাও তাদের সম্মান রাখবে।

সামাজিক যোগাযোগ এ শেয়ার করুন

একই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২১ বাংলার মুখ বিডি
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ইজি আইটি সল্যুশন