গাজীপুরের পর আজ বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি যেমন পরীক্ষা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য জনপ্রিয়তা প্রমাণের দিন। এবারের দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় সরকারি দলের প্রার্থীর সামনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে বরিশালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) চাপের মুখে আছেন। এ সিটিতে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চরমোনাই পিরের হাতপাখা মনে হলেও শেষ মুহূর্তে দৃশ্যপট বদলে শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসানের টেবিল ঘড়ি। দুই সিটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটগ্রহণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিজস্ব পর্যবেক্ষক পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বসানো সিসি ক্যামেরা নির্বাচন ভবন থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
খুলনায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা এবং বরিশালে নৌকার দলীয় কোন্দল ভোটারদের কতটা ভোটদানে আগ্রহী করবে, তা দিনশেষে তা বোঝা যাবে। প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে খুলনায় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ঘটেছে মিছিল, সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা। বরিশালে অবশ্য সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও প্রার্থীদের মধ্যে শোডাউনের তৎপরতা ছিল ব্যাপক। তবে অন্য সময়ের তুলনায় সিটি নির্বাচনের ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এবার কঠোর অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনকে। যদিও এ দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ায় ইসিকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। তবে ‘গোপন বুথের ডাকাত’ ঠেকানোর চ্যালেঞ্জ ইসির রয়েই গেছে। রয়েছে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার চ্যালেঞ্জও।
নির্বাচন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পালনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স। রয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতাও। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা আগেই জানানো হয়েছে। আশা করা যায়, ভোটাররা নির্বিঘ্নেই তাদের ভোট দিতে পারবেন। যা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনি এলাকায় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কিংবা আশপাশে কোনো বহিরাগত নারী-পুরুষ যাতে অবস্থান করতে না পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দল ও মানুষের আস্থার যে জায়গা, তা ধরে রাখতে কমিশনকেই সচেষ্ট হতে হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা দেখেছি, ইভিএমে ভোটগ্রহণ হলেও ফলাফলে বেশ বিলম্ব হয়। আশা করা যায়, এ দুই সিটিতে নির্বাচনের ফল আগেই মিলবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেশি-বিদেশি বিশ্লেষক ও কূটনৈতিক মহলের কাছে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বের। সিটি নির্বাচনগুলোর ভোটের পরিবেশের ওপরই নির্ভর করছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অবাধ ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি।
ভোটাধিকার প্রয়োগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তারা যদি তাদের দায়িত্ব শতভাগ পালন করেন, তাহলে এ আস্থার জায়গা মজবুত হবে। বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ তৎপর দেখা গেছে। নির্বাচনের দিনও এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, সেই সঙ্গে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির মাধ্যমে সব মহলের মাঝে আস্থার জায়গা তৈরিতে নির্বাচন কমিশন সফল হবে-এটাই প্রত্যাশা।