বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিতে চাই। আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। আজকে আমাদের তরুণ ভাইয়েরা, সেনাপতিরা রাস্তায় নেমেছেন। স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্ন। আমাদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। সেই বাংলাদেশকে আপনাদের রক্ষা করতে হবে। তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে এ বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি চত্বরে ছাত্রদল যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি তারুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশকে টেক ব্যাক করতে হলে লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে। সংগ্রাম আর লড়াই কে করবে। আমরা বুড়োরা না তরুণরা? প্রশ্নের জবাবে সমাবেশে উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে জবাব দেন- তরুণরা। কারাগারে আটক রাখাকালে দলের চেয়ারপার্সনকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল বলে তাদের সন্দেহের কথা জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, আপনারা কি মনে করছেন বিএনপি ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে, না। বিএনপি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। চাকরির অধিকারের জন্য লড়াই করছে। বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য লড়াই করছে। সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে গেছে আজ। লজ্জায় মাথা নুয়ে যায়। কি করেছে তারা। আমেরিকা থেকে স্যাংশন দিয়েছে, কেন। র্যাবকে কেন স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। র্যাবকে কারা ব্যবহার করেছে। কারা আমাদের ভাইদেরকে তুলে নিয়ে গুম করতে বলেছে। এই সরকার করেছে। এখন নতুন করে ভিসানীতি এসেছে। তারা লাফাতে লাফাতে বলে ভিসানীতিতে আমরা ভয় পাই না। অথচ তারা এমন ভয় পেয়েছে হাঁটু কাপাকাপি শুরু হয়েছে। কারণ তাদের সবাই বিদেশে টাকা পাচার করেছে। ভিসনীতি এমন হয়েছে তুমি যদি দিনের ভোট রাতে কর বা কুত্তা মার্কা নির্বাচন কর তাহলে তোমার রেহায় নেই।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশাল এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মো. শাহাজাহান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, নগর যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহেদ প্রমুখ।
বিকাল ৩টায় সভা শুরু হলেও এর আগে থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মী রং-বেরঙের টি-শার্ট পরে, মাথায় ক্যাপ দিয়ে মিছিলে মিছিলে জড়ো হতে থাকে কাজীর দেউড়ি চত্বরে। আউটার স্টেডিয়ামে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও জেলা প্রশাসন সেখানে স্থাপিত মঞ্চ তুলে ফেলে। খেলার মাঠে অন্য কিছু করার সুযোগ না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে- সে অনুসারেই আউটার স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।
শেষ পর্যন্ত কাজীর দেউড়ি চত্বরে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়েই সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে বিভাগের ১১টি জেলা থেকে গাড়ি নিয়ে নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, ভাঁওতাবাজি করেছে পরপর দুটি নির্বাচনে। একেবারে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। পিস্তল ধরে, প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করেছে তারা। জনগণের ওপরে স্টিম রোলার চালাচ্ছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আজকের প্রধানমন্ত্রী মাথায় হিজাব পরে হাতে তসবিহ নিয়ে সকলের কাছে মাফ চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। চাকরি হয়েছে? হয়নি। কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। আজকে করুণ অবস্থায় আছে আমাদের তরুণ সমাজ। তাদের সামনে কোন ভবিষ্যৎ নেই। তাদের সামনে অন্ধকার। তারা কিভাবে পরবর্তী জীবন-যাপন করবে। কিভাবে তারা পরিবারকে সহযোগিতা করে। সবজির দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে। কিন্তু তবে সরকারে যারা আছে তারা খুব ভালো আছে। তারাতো বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটেছে। যত টাকা উপার্জন করেছে তা বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অত্যাচার নির্যাতনে দিনাতিপাত করছি। ১৪-১৫ বছর এ অত্যাচার নির্যাতন চলছে। তারা (আওয়ামী লীগ) গুম করেছে, খুন করেছে, আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এমন কেউ কি আছে যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। সব ফ্যাসিবাদী মামলা। এখনো আসলাম চৌধুরী জেলে। এখন অনেক নেতা জেলে। অনেককে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। অনেককে গুম করা হয়েছে। খুন করা হয়েছে। আমাদের ছাত্র নেতা নুরু ও শাওনকে অকথ্য নির্যাতন করে গুম করা হয়েছে। এই চট্টগ্রামে অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছে। সারা দেশে ছয়শর বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে। আমাদের ত্যাগী নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। কোথাও কোনো শান্তি নেই। প্রতি পদে পদে আমাদের গলা টিপে ধরা হয়েছে। এই দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম। এইদেশ কি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন। এমন দেশ কেউ চায়নি। আমরা চেয়েছিলাম একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যেখানে আমাদের ভোট আমরা দেবো। যাকে খুশি তাকে দেব। আমরা কথা বলতে পারব। আমাদের মতামত আমরা বলতে পারব। আমরা সরকারের সমালোচনা করতে পারব। আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা লিখতে পারবে। সাংবাদিকরা এখন লিখতে পারেন না। কোন কারণে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে। তলোয়ার যে কারো মাথার ওপর পড়বে। গ্রেফতার করবে, গুম করবে। তারপরও কারাগারে থাকতে হবে। ঢাকায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে বাড়ির মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ খুনের কোনো হদিস মেলেনি। সরকার আবার ওই পুলিশ, ওই বিডিআর, ওই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে।
বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে সন্দেহ করে ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। শুধু আটক করে রাখেনি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগারে অনেক দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। বারবার বলেছি, তাঁকে মুক্তি দিন। আমরা জানি না, তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা। কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন, এতটা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়। তাঁকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের দলটি রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে ভোট চুরি করা। তাদের রাজনীতি ব্যাংক চুরি করা। যাদের রাজনীতি স্টক মার্কেট চুরি করা। যাদের রাজনীতি বালিশ চুরি করা। তাদের নির্ভরশীলতা হচ্ছে কিছু পুলিশের কাছে। তাদের সঙ্গে আছে কিছু পুলিশ, কিছু সরকারি কর্মকর্তা, আর কিছু র্যাব। তাদের সঙ্গে আর কেউ নেই। দেশেও নেই। বিদেশেও নেই। বিএনপির নির্ভরশীলতা হচ্ছে এ দেশের জনগণ। জনগণ রাস্তায় নেমেছে। এ সরকারকে বিদায় করার জন্য। তাদের এবার নামতেই হবে।