সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সবচেয়ে বেশি।
শনিবার বাংলার মুখ বিডি ২৪এ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে বোঝা বেড়ে এ বৈদেশিক ঋণ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত ১৪ বছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার ৩৪৬ কোটি ডলার।
২০০৮ সাল থেকে আলোচ্য সময়ে ঋণ বেড়েছে ৩২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মন্দায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এখন বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ডলার সংকটে নিয়মিত ঋণ শোধ করতে না পারায় এর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এতে ঋণের অর্থও বেড়ে যাচ্ছে।
জিডিপির আকারের তুলনায় অবশ্য বৈদেশিক ঋণের অনুপাত এখন আগের চেয়ে কমেছে বলেই দেখা যাচ্ছে। ২০০৮ সালে দেশের জিডিপির তুলনায় যেখানে বৈদেশিক ঋণ ছিল ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে। সাধারণত জিডিপির আকারের তুলনায় বৈদেশিক ঋণ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি হলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। সে তুলনায় বৈদেশিক ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে নেই। তবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনীতির সব সূচককে এখন আঘাত করতে শুরু করেছে ডলার সংকট।
গত বছরের মার্চে প্রতি ডলারের গড় দাম ছিল ৮৬ টাকা; বর্তমানে যা ১১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ডলারে ২৪ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। আবার সাধারণত ছয় মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) আলোকে যে বৈদেশিক ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হয়, তা এক বছরের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
আবার স্বল্প কিছু ঋণ এক মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের সুদের হারের ভিত্তিতেও নেওয়া হয়। এক বছরের ব্যবধানে সেখানেও সুদ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে ঋণের বিপরীতে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
বৈদেশিক ঋণের এ চাপ সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রায় ঘাটতি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ডলারের সংকট প্রকট হচ্ছে, দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর টাকার মান কমায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ফলে কমে যাচ্ছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। উদ্বেগের বিষয় হলো, ঋণ পরিশোধে রিজার্ভে ডলারের টান কমাতে ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি করের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের দিকে মনোযোগী হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে, বাজেটে যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। রাজস্ব বৃদ্ধিতে অযৌক্তিক এসব পদক্ষেপ জনমনে ভীতির জন্ম দিচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারকে ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’র মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পে রাশ টানতে হবে। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে দ্বিগুণ/তিনগুণ ব্যয়ে সম্পন্ন করার প্রবণতা ত্যাগ করে মিতব্যয়িতার পরিচয় দিতে হবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে তা পরিশোধে যত্নশীল হতে হবে। ঋণনির্ভর না হয়ে স্বাবলম্বী অর্থনীতির দিকে সরকার মনোযোগ দেবে, এটাই প্রত্যাশা।