স্পোর্টস ডেস্ক:
ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় প্রায় শেষ হয়ে যায় বেশ আগেই। সবার চোখ তখন ভিরাট কোহলির দিকে। জয়ের জন্য দলের প্রয়োজন ২ রান, সেঞ্চুরির জন্য কোহলির দরকার ৪। স্পিনার খুশদিল শাহর বলে বেরিয়ে এসে দারুণ শটে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছলেন ভারতীয় তারকা, নিশ্চিত করলেন দলের জয়ও।
পাকিস্তানকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল ভারত। টুর্নামেন্টের হাইভোল্টেজ ম্যাচে একপেশে লড়াইয়ে রোববার রোহিত শার্মার দলের জয় ৬ উইকেটে।
দুবাইয়ে পাকিস্তানকে ২৪১ রানে গুটিয়ে দিয়ে ভারত লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ৪৫ বল বাকি থাকতেই।
সাচিন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১৪ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে রেকর্ড সমৃদ্ধ করা ৫১তম সেঞ্চুরি উপহার দিলেন কোহলি। ৭ চারে ১১১ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা তিনিই।
আইসিসি টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই নিয়ে পাঁচবার ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পেলেন ৩৬ বছর বয়সী কোহলি। কোনো একটি দলের বিপক্ষে এই স্বীকৃতি তিনবারের বেশি নেই আর কারও।
চমৎকার বোলিংয়ে ভারতের জয়ের ভিত মূলত গড়ে দেন বোলাররা। ৬ ওভারের প্রথম স্পেলে দারুণ বোলিংয়ে বাবর আজমের উইকেট তুলে নেন হার্দিক পান্ডিয়া। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার পরে শিকার ধরেন আরেকটি। ৪০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার অবশ্য বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদিপ ইয়াদাভ।
লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের সুর বেঁধে দেন অধিনায়ক রোহিত ও শুবমান গিল। দ্বিতীয় ওভারে নাসিম শাহকে পরপর চার ও ছক্কা মারেন রোহিত। পরের ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে দুটি চার মারেন গিল।
পঞ্চম ওভারে আফ্রিদিকে আরেকটি চার মেরে পরের বলে ইয়র্কারে বোল্ড হন রোহিত (১৫ বলে ২০)। পাওয়ার প্লেতে ভারত করে ১ উইকেটে ৬৪ রান।
পরের ওভারে গিলকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল, কিন্তু মিডউইকেটে ক্যাচ ফেলেন খুশদিল।
৩৫ রানে জীবন পেয়ে গিল ১১ রানের বেশি অবশ্য যোগ করতে পারেননি। এই ওপেনারকে (৫২ বলে ৪৬) বোল্ড করে ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ।
এ দিন ১৫ রানে পৌঁছে ১৪ হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করেন কোহলি। গিলের বিদায়ের পর শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে জুটি বেঁধে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। ফিফটি পূর্ণ করেন ৬২ বলে।
খুশদিলের বলে ২৫ রানে শ্রেয়াসের ক্যাচ হাতছাড়া করেন শাকিল। ক্যাচটি নিতে পারলে জুটি ভাঙতে পারত ৫৮ রানে, সেই জুটিতে আসে ১১৪ রান। পাকিস্তানও ছিটকে যায় লড়াই থেকে।
ফিফটি করার পর ইমাম-উল-হাকের চমৎকার ক্যাচে ফেরেন শ্রেয়াস (৬৭ বলে ৫৬)। একটি চার মেরে বিদায় নেন পান্ডিয়া। আকসার প্যাটেলকে নিয়ে বাকিটা সারেন কোহলি।
একটা পর্যায়ে জয়ের জন্য ভারতের দরকার যখন ১২ রান, কোহলির সেঞ্চুরির জন্যও ১২। আফ্রিদি কয়েকটি ওয়াইড দেওয়ায় কোহলির সেঞ্চুরি নিয়ে দেখা দেয় খানিকটা সংশয়। শেষ পর্যন্ত ঠিকই তা পেয়ে গেলেন তিনি।
ভারতের ম্যাচের শুরুটা হয় অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ড গড়ে। নেদারল্যান্ডসকে (১১) পেছনে ফেলে ওয়ানডেতে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচে টস হারের রেকর্ডে এককভাবে চূড়ায় এখন তারা (১২)।
পাঁচটি ওয়াইডসহ ম্যাচের প্রথম ওভার শেষ করতে মোহাম্মদ শামির লাগে ১১ বল! ভারতের হয়ে ওয়ানডেতে যৌথভাবে সবচেয়ে দীর্ঘতম ওভার এটি।
চোটে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া ফাখার জামানের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ইমাম ও বাবর প্রথম আট ওভারে তোলেন বিনা উইকেটে ৩৭ রান। দারুণ কয়েকটি চার মারেন বাবর। কিন্তু পরের দুই ওভারে বিদায় নেন দুজনই।
বাবরকে (২৩ বলে ২৬) ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পান্ডিয়া। ইমাম (২৬ বলে ১০) কাটা পড়েন রান আউটে।
দ্রুত দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সাউদ শাকিল। তবে তাদের রান তোলার গতি ছিল খুবই মন্থর।
প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান করে ২ উইকেটে ৫১ রান, পরের ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ২৭!
শাকিল ফিফটি করেন ৬৩ বলে। ৪৪ রানে জীবন পেয়ে রিজওয়ান যোগ করতে পারেন আর ২ রান। পাকিস্তান অধিনায়ককে (৭৭ বলে ৪৭) বোল্ড করে ১৪৪ বলে ১০৪ রানের জুটি ভাঙেন বাঁহাতি স্পিনার আকসার।
ওই ওভারে জীবন পেয়ে পরের ওভারে বিদায় নেন শাকিল (৭৬ বলে ৬২)। দ্রুত ফেরেন তাইয়াব তাহির। ১৮ বল আর ১৪ রানের মধ্যে ওই ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
১৬৫ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের স্কোর দুইশ পর্যন্ত টেনে নেন সালমান আলি আগা ও খুশদিল। এরপরই টানা দুই বলে সালমান ও আফ্রিদিকে ফিরিয়ে দেন কুলদিপ।
সেখান থেকে পাকিস্তান ২৪১ পর্যন্ত যেতে পারে মূলত খুশদিলের ৩৯ বলে ৩৮ রানের সুবাদে। কিন্তু এই পুঁজি নিয়ে পাত্তাই পেল না তারা।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে আগামী বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। তার আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে পাকিস্তানের, যদি রাওয়ালপিন্ডিতে সোমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতে নিউ জিল্যান্ড। সেমি-ফাইনালে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখতে কিউইদের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৯.৪ ওভারে ২৪১ (ইমাম ১০, বাবর ২৩, শাকিল ৬২, রিজওয়ান ৪৬, সালমান ১৯, তাহির ৪, খুশদিল ৩৮, আফ্রিদি ০, নাসিম ১৪, রউফ ৮, আবরার ০*; শামি ৮-০-৪৩-০, হার্শিত ৭.৪-০-৩০-১, পান্ডিয়া ৮-০-৩১-২, আকসার ১০-০-৪৯-১, কুলদিপ ৯-০-৪০-৩, জাদেজা ৭-০-৪০-১)
ভারত: ৪২.৩ ওভারে ২৪৪/৪ (রোহিত ২০, গিল ৪৬, কোহলি ১০০*, শ্রেয়াস ৫৬, পান্ডিয়া ৮, আকসার ৩*; আফ্রিদি ৮-০-৭৪-২, নাসিম ৮-০-৩৭-০, রউফ ৭-০-৫২-০, আবরার ১০-০-২৮-১, খুশদিল ৭.৩-০-৪৩-১, সালমান ২-০-১-০)
ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ভিরাট কোহলি