অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন, স্বভাবতই তাতে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হয়েছিল। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনতুষ্টির কথা ভেবে তিনি নিত্যপণ্যের দাম কমানোর বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন, এমনটিই ছিল প্রত্যাশিত।
বস্তুত প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য খুব বেশি সুখবর নেই। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বার্ষিক ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হলেও কেউ আয়কর রিটার্ন জমা দিলেই তাকে ২ হাজার টাকা কর প্রদান করতে হবে। অসচ্ছল ও নিম্নবিত্ত মানুষকেও সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পেতে এ কর দিতে হবে।
এ ছাড়াও বাজেটে ভ্যাট ও শুল্ক-কর খাতে এমন অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়বে। বাজেটে ফ্ল্যাট-প্লট ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিবন্ধনে উৎসে কর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের আবাসন শিল্পে।
তবে সুখবর হলো, বাজেটে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা নতুন অর্থবছর থেকেই চালু হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিম্নআয়ের মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে, সন্দেহ নেই। মধ্যবিত্তের জন্যও এমন স্বস্তিদায়ক প্রণোদনা কাম্য। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৯ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। তবে কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দিয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে শিক্ষার অন্যতম এ উপকরণটির দাম বেড়ে যেতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়।
৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আয় প্রাক্কলনের ফলে ঘাটতিই থেকে যাচ্ছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এ বড় অঙ্কের ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এজন্য যে সক্ষমতা প্রয়োজন, সেটা অর্জন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। দেশে বাজেট ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। এটি কাটিয়ে ওঠা জরুরি।
বাজেটের যথার্থ বাস্তবায়নে বরাদ্দের অর্থ সঠিক সময়ে খাতগুলোতে পৌঁছাতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহারে প্রতিটি খাতে বাড়াতে হবে দক্ষতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা। রোধ করতে হবে অপচয়। সংসদে বাজেট নিয়ে অর্থবহ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। সংসদের বাইরে বিশেষজ্ঞরাও তাদের মতামত দেবেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আমরা আশা করব, কর প্রস্তাবসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংসদের ভেতর ও বাইরে থেকে যেসব সুপারিশ উঠে আসবে-যৌক্তিকতা বিচার করে বাজেটে সে অনুযায়ী সংশোধন আনতে দ্বিধা করবে না সরকার।