ডেস্ক/// কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে সরকার দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী এবং কোটা সংস্কারের নেতাদের নির্যাতন করা হবে না, অপরদিকে প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, প্রতিবন্ধী শিশু এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এমনকি চাকরিজীবীরা পর্যন্ত এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
রোববার (২৭ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরুদ্দিন ওয়াসিম, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। গতকাল দিনের বেলায় শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হজরত আলীর মালিকানাধীন রোজবার্গ রাইস মিলে ৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী এবং কয়েকজন সাদা পোশাকধারী পুলিশ প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে। রাজশাহী জেলার বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল, রংপুর মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম মিজু, জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সহ সাধারণ সম্পাদক ফ্লাইট লে. (অব.) ড. হারুনুর রশিদ ভূঁইয়াসহ ছাত্রদল নেতা এইচ এম আবু জাফর, তবিবুর রহমান সাগর, আবু হান্নান তালুকদার, ইমাম আল নাসের মিশুক, ফজলুর রহমান বিজয়, ইরফান আহমেদ ফাহিম, ফেরদৌস মাহমুদ রুবেল ও নাজমুর হাসান পাপনকে গতকাল সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তারকৃত সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১০ নং ধানবান্ধি ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সঞ্জীব ভূঁইয়াকে পুলিশ নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার পর আজ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কোটা সংস্কার সমন্বয়কারী সারজিদ আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। সারা দেশে ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সরকারের নানামুখী ষড়যন্ত্র, অপকৌশল ও নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যারা প্রকাশ্যে সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করলো তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি, বরঞ্চ তাদের নিয়ে সরকারপ্রধান মায়া কান্না করছে।
সারা দেশে ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সাবেক এমপি-মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অসুস্থ হওয়া সত্বেও তাদের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের মতো ৫/৭ দিন করে রিমান্ডে নির্যাতন করা হচ্ছে। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে। তাদের নির্মমভাবে চোখ ও হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের নিরন্তর চেষ্টা চলছে। তারা আদালতকে অবহিত করেছে, তার পরেও আদালত সরকারপ্রধানের ইশারায় তাদের রিমান্ড অব্যাহত রেখেছে। তাদের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত, তাদের ওপর চলমান নির্যাতনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয়ে গেলে এর দায় সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে। জেলখানার ভেতরেও নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক এবং আইনের পরিপন্থী। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, দেশটা আজকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে। দিন দিন নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকার যতই ছলচাতুরী করুক না কেন গণদাবির কাছে পদত্যাগ করতেই হবে। মানুষ যখন প্রতিবাদ শুরু করেছে, এই প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত থাকবে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে যে, গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয় নাই অথচ শিশু আহাদ, সামীর থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ পথচারী সকলেই গুলিতে নিহত হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, হত্যার সংখ্যা অনেক লম্বা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাছাড়া সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার বাণিজ্য অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধীদলের সব নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফ্লাইট লে. (অব.) ড. হারুনুর রশিদ ভূঁইয়াকে জনসমক্ষে হাজির করারও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সরকার নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষে সারা দেশে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এবং হত্যা, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করে পদত্যাগের দাবি জানান। অন্যথায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এমএ/এনএইচ