নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় আড়াই মাস আগে এক দফা দাম বাড়িয়ে বাজারে কিছু দিনের জন্য দৃশ্যমান হওয়া বোতলের সয়াবিন তেল আবার ‘উধাও’ হয়ে গেছে; কোনো কোনো বাজারে কয়েক দোকান ঘুরেও পণ্যটি কিনতে না পারার অভিযোগ শুনিয়েছেন ভোক্তারা।
তেল-চাল নিয়ে ভুগতে থাকা রাজধানীবাসীর স্বস্তি ছিল শীতকালীন সবজি নিয়ে; সেটাও শেষের পথে। এরই মধ্যে কিছু সবজির দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী ও নিকেতন কাঁচাবাজারের কোনো কোনো দোকানে বোতলজাত সয়াবিনের পরিবর্তে বোতলজাত পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে কিছু দোকানে তেল মিললেও নিকেতন কাঁচাবাজারের অন্তত ৫টি দোকানে ঘুরে চেনা ব্র্যান্ডের কোনো সয়াবিন তেল চোখে পড়েনি।
নিকেতন কাঁচাবাজারের ‘রিপা জেনারেল স্টোরে’ গিয়ে সয়াবিন তেল চাইলে বিক্রেতা ধরিয়ে দিলেন বোতলের পাম ওয়েল; দাম আবার সয়াবিনের সমান।
আধা লিটারের দাম ৮৫ টাকা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত সয়াবিনের দামেই (১৭৫ টাকা লিটার) পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে।
কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেলের ক্রাইসিস বেশ কিছুদিন ধরেই। এখন, ডিলাররা তেলের সঙ্গে অন্য মাল দিতে চায়। আবার ক্রেতারা অনেকেই এসে খোঁজে বোতলের তেল। তাদের জন্যই এই তেল। এখন বোতলের তেল পেলেই তো বিক্রি করব।”
এই দোকানে তেল কিনতে এসেছিলেন মোহাম্মদ সবুর নামের একজন। ক্ষোভ প্রকাশ করে এই ক্রেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসা মহাখালী হলেও শুধু তেলের জন্য এখন কারওয়ান বাজার গিয়ে মাঝেমধ্যে বাজার করতে হয়। নইলে বোতলের পামওয়েল কিনি। এতদিন ধরে তেল নিয়ে সমস্যা, একবার দামও বাড়ল, অথচ সমাধান হল না।”
রমজান মাসের সপ্তাহ খানেক আগে এসে বাজারে ফের বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট তৈরি হওয়ায় ‘ক্ষোভ’ ও ‘বিরক্তি’ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘মাসুমা’ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা আল আমিন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সয়াবিন তেল পেয়েছি দুইদিন আগে ১০ কার্টন। তবে এর সঙ্গে চিনিগুড়া চাল নিতে হয়েছে এক বস্তা। এখন চাল জিনিসটা চলে বলে নিলাম। তেল তো লাগেই।
“কিন্তু মাঝেমধ্যে স্লো আইটেম ধরিয়ে দেয়, তখন বিপাকে পড়ে যাই। আগে এই জিনিসটা কম হত। এখন তেলের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকেই কিছু না কিছু কেনা লাগে সঙ্গে।”
বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের এমন সংকট দেখা দেয় গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে। এরপর ৯ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় পরিশোধনকারীরা।
তখন থেকে প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা ও খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা। দাম বাড়ানোর কয়েক দিন পর বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বাড়ে।
সরবরাহ কমে আসায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শাতকালীন সবজির দাম।
সরবরাহ কমে আসায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শাতকালীন সবজির দাম।
সরবরাহ বাড়বে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে
আড়াই মাসের মধ্যে একই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
তাদের ভাষ্য, রোজার বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের কোম্পানিগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে; সংকটের কোনো সুযোগ নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলছে, রোজায় বাড়তি লাভের আশায় কেউ মজুদ করে থাকলেও সংকট অচিরেই কেটে যাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে।
ভোজ্যতেলের সরবরাহে ঘাটতির সংবাদে ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভোক্তা ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে আমরা অনুরোধ করছি, তারা যেন আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত ভোজ্যতেল না কেনেন।
“সমিতি এ সংকট মোকাবেলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর কিংবা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে।”
কবে নাগাদ ‘অতিরিক্ত’ তেল বাজারে আসবে জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের পরিচালক সফিউল আতহার তাসলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই তিন দিন আগে ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে মিটিংয়ে আমরা জানিয়েছি ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নতুন আমদানি করা তেল বাজারে ঢুকবে। সে মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম
বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, শিমের মত সবজির সরবরাহ গেল সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। এর প্রভাবে এসব সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এক কেজি শিম মানভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গেল সপ্তাহে যা ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি ছিল। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি; গেল সপ্তাহে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
সরবরাহ কমে আসায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শাতকালীন সবজির দাম।
সরবরাহ কমে আসায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শাতকালীন সবজির দাম।
ফুলকপি এবং বাঁধাকপি আকৃতিভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। গেল সপ্তাহে যা ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা।
বাজারে বেগুন আকৃতিভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে, যা গেল সপ্তাহে ৫০ টাকাতেও মিলেছে।
শীতকালীন সবজির মধ্যে লাউ আকৃতিভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কেজিপ্রতি মুলা ৩০ টাকা, লেবুর হালি ৩০ থেকে ৫০ টাকা ও ধনে পাতা ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিন শসা ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, গাজর ৪০ টাকা ও পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। কচুর লতির কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা ও চিচিঙ্গা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।
মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শীতকালীন সবজির সিজন প্রায় শেষ দিকে; সরবরাহ কিছুটা কম। সেজন্য দাম কিছুটা বেড়েছে। গরমের সবজি (গ্রীষ্মকালীন) বাজারে আসতে শুরু করেছে।”
এই বাজারের ক্রেতা বেসরকারি চাকুরে আবিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেল সপ্তাহে টমেটো নিয়েছিলাম ৩০ টাকা করে। বড় বড়; পাকা টমেটো। আজ নিলাম ৩৫ টাকা করে। শিম নিলাম ৩০ টাকা করে।
“বিক্রেতারা বলছে, সিজন নাকি শেষ দিকে। যদিও অন্যান্য শাকসবজির দাম মোটামুটি স্থিতিশীল আছে।”
বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি দেশি পেঁয়াজ মিলছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যেই। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা।
এছাড়া আদা ১৪০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।