নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশব্যাপী নারীর ওপর সহিংসতা, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও সামাজিক হেনস্তার প্রতিবাদে এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোমবাতি প্রজ্জলন করে এবং শ্হাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ নিচতলায় মোমবাতি প্রজ্জলন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা ।
প্রতিবাদ সমাবেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নুসরাত জাহান রানির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি বিভাগের ভূমিকা সরকার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নিশাত মালিহা ঐশি, জাহিদুল ইসলাম, আইন বিভাগের আব্দুর রহমান, ইসরাতুন্নেহা।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ বলেন, “আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণে সারাদেশে নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন মহামারির মত বাড়ছে। এ ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি বলেন, “নারীকে পণ্য বানানোর যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত নারীদের মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিত করতে হবে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামজুদা মোস্তফা লামিয়া বলেন, “নারী পুরুষের ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। বরং নারীদের সম্মানের চোখে দেখলে ধর্ষণের মত জঘণ্য অপরাধ সংঘটিত হত না।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে আইনের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। নীরব ভূমিকা থেকে উত্তরণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।”
সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল গঠন ও সেলটিকে সক্রিয় করার জোর দাবি জানান।
এদিকে শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে সামনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে মিছিলটি ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে মিলিত হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘নারীর পীড়ন যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’, ‘ধর্ষকদের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী’, ‘রাজশাহীতে ধর্ষণ হয়, ইন্টেরিম কী করে’-সহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান।
মিছিল পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার বলেন, “জুলাইয়ের রক্তের ওপর যে সরকার দাঁড়িয়েছে এই সরকার নারীর ওপর ধর্ষণ ও নিপীড়নকে বন্ধ করতে পারছে না। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে আপনার একদিনও আর ক্ষমতা ভোগ করার দরকার নেই।”
“আপনাকে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য সেখানে বসানো হয়নি। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারীদের শ্লীলতাহানির সঙ্গে যারাই জড়িত, কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যা না, ক্রসফায়ার না, তাদেরকে ও সকল কুশীলবকে দ্রুতই আইনানুগ বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসি মঞ্চে নিয়ে যেতে হবে।”
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা নুসরাত বলেন, “আমি চাই জাতীয় দিবসগুলোতে ফুল দিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে, ক্লাস করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে। আমি আমার মৌলিক অধিকারটুকু চাই।
শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিলটি ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।
“কিন্তু যে দেশে একটি শিশু মাতৃভাষা দিবসের ফুল কুড়ানোর সময় ধর্ষিত হয়, সে দেশে থাকতে আমার ভয় হয়। কিন্তু কেন হবে এ ভয়? আমি অন্তবর্তী সরকারের কাছে এর জবাব চাই।”
তিনি আরও বলেন, “নারী হওয়ার কারণে আমাকে অবলা হিসেবে কেনো আচরণ করা হচ্ছে, কেনো ধর্ষণকে সাধারণ করা হচ্ছে। কেনো ধর্ষকরা শাস্তি পাচ্ছে না। শাস্তি পাচ্ছে না বলেই ধর্ষণের মত ঘটনা সাধারণ ঘটনায় রূপান্তর হচ্ছে।
“কেনো বোনদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে আমাদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। সবগুলো জবাব আমাদেরকে জানতে হবে।”
এ সময় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরাব সাদাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ফয়সাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের নাজনীন লিজা এবং মুরারিচাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) শিক্ষার্থী তানজিনা বেগম।